ষষ্ঠীদেবী বা ষষ্ঠীঠাকুর হলেন বঙ্গীয় ও বহির বঙ্গীয় সনাতন (হিন্দু )ধর্মাবলম্বী এক পৌরাণিক দেবী। ইনি মূলতঃ সন্তানদাত্রী ও তাহার রক্ষাকর্ত্রী দেবী; তার কৃপায় নিঃসন্তান দম্পতিদের সন্তান লাভ হয় এবং তিনিই সন্তানের রক্ষাকর্ত্রী, পুরাণ মতে যেহেতু তিনি আদিপ্রকৃতির ষষ্ঠাঙ্গ অংশভুতা তাই তাহার নাম ষষ্ঠী দেবী ।
শীতল-ষষ্ঠী ব্রত
ব্রতের নিয়ম :
মাঘ মাসে শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীর দিনকে গৃহিনীকে ষষ্ঠীপূজা করতে হয়। পূজাতে ফল, হলুদ, কলাই সন্দেশ প্রভৃতি দিতে হয়। পূজার দিন উনান জ্বালাতে নেই। তাই তার আগের দিন বিভিন্ন আনাজ গোটা গোটা কেটে সিদ্ধ করে রাখতে হয় এবং ভাতও করে তাতে জল ঢেলে রাখতে হয়। সেই ঠাণ্ডা ভাত ও তরিতরকারি পরদিন খেতে হয়। পূজারদিন গরম মুখ করতে নেই। খালি সুতো নিয়ে হলুদ ও দইয়ে চুবিয়ে সেই সুতো ছেলেদের হাতে বেঁধে দিতে হয়, এতে তাদের মঙ্গল হয়।
বতকথাঃ
বহুদিন আগে এক বামুন আর বামনী তাদের সাত ছেলেকে নিয়ে একদেশে বাস করতো। তারা দুই স্বামী-স্ত্রীতে মিলে একে একে সাত ছেলেকে বিয়েও দিলো। কিন্তু তাদের সাত- ছেলের কারুরই কোনো ছেলেপুলে হয় না। এ নিয়ে তারা খুব চিন্তায় থাকে এবং কান্নাকাটি করতে থাকে মা ষষ্ঠীর কাছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু সুফল হয় না। তারপর একদিন হঠাৎ এক বুড়ি এলো তাদের বাড়িতে। বুড়িটা এসে বাড়ির গিন্নীকে জানতে চাইলো তাদের মন এতো খারাপ কেন। উত্তরে শিল্পী বলল যে তাদের সাত ছেলের বিয়ে হয়েছে অনেকদিন। সাত বউও সবদিকে ভালো তবুও তাদের মন খারাপ কারণ তাদের সাত ভাইয়ের কোনো সন্তানাদি হয়নি। কী করলে তাদের সন্তানাদি হবে এই চিন্তাতেই তাদের মন খারাপ। সব কথা শুনে বুড়িটা শিল্পীকে বলল যে তারা যদি সবাই মিলে মাঘ মাসের শুক্লাপক্ষের ষষ্ঠীর দিন মা ষষ্ঠীর পুজো দেয় তাহলে তাদের চিন্তা দূর হবে। এই কথা শুনে গিন্নী তার কাছ থেকে পূজার নিয়ম জানতে চাইলো এবং সেই বুড়িটাও সব নিয়ম বলে দিলো। সে বলল যে, আগের দিন শিল জাগাতে হয়। শিলের সারাটা গায়ে হলুদে ছাপিয়ে নেওয়া নেকড়া চাপা দিয়ে ৬টি সিঁদুর ৬টি শ্বেতচন্দনের ফোঁটা দিতে হবে। তারপর শিলের কোলে নোড়া দিতে হবে।
এরপর জোড়া কুল, জোড়া কলা, জোড়া কড়াইশুঁটি, জোড়া সীম এগুলো দিতে হবে। তার পরের দিন ষষ্ঠীপূজার সঙ্গে সঙ্গে ওই শিলের গায়ের তেল হলুদ- দই দিয়ে পূজা করতে হবে। পূজার দিন গরম মুখ করা যাবে না। এই কথাগুলি বলে বৃদ্ধা ভিক্ষারীটা চলে গেল। তারপর মাঘ মাসে নিয়ম মতো ঘট পেতে শিল জাগিয়ে ষষ্ঠীর পূজা দিলেন এবং গিন্নী ও তার সাত বউ মা ষষ্ঠীর কাছে তাদের নিজ নিজ বর প্রার্থনা করল। এরপর দেখতে দেখতে প্রত্যেক বউ-এরই মা ষষ্ঠীর দয়াতে এক এক করে সাতটি করে ছেলে হল। ছেলেগুলো বড় হল বিয়েও হল। বাড়ির কর্তা গিন্নী বুড়ো হলো। তখন ষষ্ঠীর পূজার যাবতীয় নিয়ম-কানুন ছেলের বউদের উপর বর্তালো। তারা প্রতি বছর মা ষষ্ঠীর পূজা করে।
হঠাৎ একবছর বউরা অগের দিন থেকে সব জোগাড় করে দিনের দিন পূজার জোগাড় করছে এমন সময় গিন্নী ঘুম থেকে উঠে বলল সে সেদিন গরম জলে স্নান করবে এবং গরম ভাত-ঝোল খাবে। এই কথা শুনে বউরা তো অবাক হয়ে গেলো। কিন্তু শেষপর্যন্ত তারা একপ্রকার বাধ্য হয়েই শাশুড়ির জন্য গরম ভাত রেঁধে দিলো, গরম জল করে দিলো স্নান করার জন্য। কিন্তু বউরা সবাই নিষ্ঠাভরে পূজা দিল ও পূজার পর প্রমান খেলো। তারপর সেদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। হঠাৎ শেষরাতে স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেলো গিন্নীর। ঘুম থেকে উঠে সে দেখলো তার আশেপাশে যারা আছে যেমন তার ছেলেরা বউরা, নাতি-নাতনিরা এমনকি বিড়াল, কুকুর সবই মরে পড়ে আছে। তাই দেখে শিল্পীতো হাউ হাউ করে কাদতে লাগলো আর মাথার চুল ছিঁড়তে লাগলো। শব্দ পেয়ে গ্রাম থেকে অনেকেই ছুটে এলো তাদের বাড়ি। সকলেই এসে গিন্নীকে ছিঃ ছিঃ করে চলে গেলো। গিন্নী কাঁদতে কাঁদতে প্রায় পাগলের মতো অবস্থা হয়ে গেলো।
তার আগের দিনের ব্যবহারের জন্য মনে মনে অনুতপ্ত হল। ক্ষমা চাইলো মা ষষ্ঠীর কাছে আগের দিন গরম মুখ করার জন্য। তার অনেক কান্নাকাটির পর শেষ পর্যন্ত মা ষষ্ঠীর দয়া হল। তিনি শেষ পর্যন্ত এলেন সেই গিন্নীর কাছে। দোষারোপ করলেন আগের দিনের তার ব্যবহারের জন্য। তখন গিন্নী তাঁর থেকে তার আশেপাশের সকলের বেঁচে ওঠার উপায় জানতে চাইল এবং আগের দিনের ব্যবহারের জন্য আবারও ক্ষমা চাইল। তখন মা ষষ্ঠী বললেন একটাই মাত্র উপায় আছে। সেটা হল, সে যদি শিলের গায়ে লেগে থাকা তেল হলুদ দই দিয়ে প্রথমে বিড়াল তারপর কুকুর এইভাবে একের পর একের কপালে ফোঁটা দেয় এবং হলুন দইয়ে ছোপানো ডুরি যদি সে তার ছেলে-বউ, নাতি-নাতনি সকলের হাতে বেঁধে দেয় তাহলে সকলে আবার বেঁচে উঠবে। এই বলে মা ষষ্ঠী চলে গেলেন। তারপর গিন্নী মা ষষ্ঠীর কথামত সব কিছু করল। তারপর সবাই বেঁচে উঠল। তারা কেউ জানত না যে তারা মারা গেছিল। তারা সবাই ভাবছিলো যে তারা যেন ঘুম থেকে উঠল। কিন্তু তারপর তারা আসল কথা, গিরীর থেকে শুনলো। সবাই একটু রাগারাগি করে তারপর ধুমধাম করে মা ষষ্ঠীর পূজা দিলো। তারপর আবার তারা বছর বছর মা ষষ্ঠীর শীতল ষষ্ঠী পূজা করতে লাগলো। এইভাবে এই পূজা ছড়িয়ে পড়লো।
ব্রতফল :
যে সমস্ত রমণীগন এই ব্রত পালন করে তাদেরকে কোনো দুঃখ গ্রাস করতে পারে না। সুখে শান্তিতে তারা বাঁচতে পারে।
Post Highlights:
Post Title: শীতল ষষ্ঠী ব্রত ও ব্রতের ফল। Sital Sasthi Brata Katha With PDF
Time of Brata: মাঘ মাস | Magh Mash
Download PDF: Sital Sasthi Brata Katha With PDF
You May Like Also Also Like This
0 Comments