সরস্বতীর পাঁচালী
প্রণাম করিনু সরস্বতীর চরণে।
যাঁর পূজা করেছিল দেবাসুর গণে॥
যাঁর কৃপাবলে মূর্খ হয় জ্ঞানবান।
তার জন্ম বিবরণ শুন মতিমান৷৷
নারায়ণ ছিল যবে অনন্ত শয্যাতে।
প্রকৃতির সৃষ্টি হয় বাম অঙ্গ হতে ৷৷
একই প্রকৃতি পরে নানা মূর্তি হয়।
তাঁরই রূপ সরস্বতী জানিবে নিশ্চয় ৷৷
যেবা করে তাঁর পূজা এই ভূমণ্ডলে।
চারি বেদ সর্ব শাস্ত্র তার করতলে ৷৷
মাঘ মাসে শুক্লপক্ষে পঞ্চমী তিথিতে।
বিদ্যারম্ভ পূর্বে তাঁরে পূজিবে ভক্তিতে৷৷
পূর্ব দিনে হবিষ্যান্ন করিয়া গ্রহণ।
শ্রীপঞ্চমী দিনে তাঁর করিবে অৰ্চন ৷৷
সন্ধ্যা বন্দনাদি ক্রিয়া করি সমাপান।
মনোমত ঘট এক করিবে স্থাপন৷৷
গণেশাদি পঞ্চ দেবে পূজি তারপরে।
করিবে দেবীর পূজা অতি ভক্তিভরে।
নৈবেদ্যাদি দিবে যাহা শুন মতিমান।
ক্ষীর ছানা মিষ্টান্নাদি করিবে প্রদান৷৷
শ্বেত পদ্ম কিংবা তাঁরে শ্বেত পুষ্প দিবে।
নব বস্ত্র দিয়া তাঁরে যতনে পূজিবে ৷৷
শঙ্খ আভরণ আদি সুগন্ধী চন্দন।
শ্বেত পুষ্প মাল্য তাঁরে করিবে অৰ্পণ ৷৷
নানাবিধ ফল মূল সাজায়ে যতনে।
করিবে দেবীর ধ্যান ভক্তিযুক্ত মনে৷৷
শ্বেতবর্ণা হাস্যময়ী অতি মনোহরা।
রতন ভূষণ তাঁর সর্ব অঙ্গে ধরা ৷৷
কোটিচন্দ্র প্রভা তিনি করেন ধারণ।
শ্বেতবস্ত্র পরিধানে শ্বেত পদ্মাসন।
ব্রহ্মা বিষ্ণু আদি করি দেবতা নিকর।
অর্চনা করেন তাঁরে হয়ে একত্তর।
অসুর দানব আর যত নরগণ।
ভক্তিভরে সবে তাঁরে করেন অর্চন ৷৷ ‘
ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ' এই মন্ত্ৰ অষ্টাক্ষর।
ভক্তিভরে সাধ্যমত জপ নিরন্তর।
এই মন্ত্র যেইজন জপে ভক্তিভরে।
দেবী বরপুত্র হয় জানিবে সংসারে।
পূর্বা কালে এই মন্ত্র ভাগীরথী তীরে ।
নারায়ণ দিয়াছিল বাল্মীকি ঋষিরে ৷৷
পুষ্করে শুক্রকে দেন ভৃগু মহামতি।
মরীচির কাছে পান গুরু বৃহস্পতি ৷৷
ভৃগুরে এ মন্ত্র দেন দেব পদ্মাসন।
জরৎকারু আস্তিকেরে করেন অৰ্পণ ॥
কলিযুগে কালিদাস মহামূর্খ ছিল।
দেবীর কৃপায় মহাকবি যে হইল ৷৷
বাক্যের দেবতা তিনি বাগদেবী নাম।
যাঁহার কৃপায় কথা বলি অবিরাম ৷৷
মন্ত্র-তন্ত্র যাহা কিছু সংসার ভিতরে।
সকলি অসার যদি বাক্য নাহি স্কুরে৷৷
মনুষ্য হইয়া যেবা না পূজে তাঁহারে।
সপ্ত জন্ম মূর্খ হয়ে থাকে এ সংসারে।
বোবা হয়ে সে জনার পঞ্চ জন্ম যায়।
অতি দুঃখে দিন কাটে নাহিক সংশয়।
পূজা অন্তে বাগদেবীর বন্দনা করিবে।
তারপর ভক্তিভরে নির্মাল্য লইবে।
You May Like Also Also Like This
0 Comments