নাটাই ষষ্ঠীর ব্রত
ব্রতকথা:
দীর্ঘদিন আগে নন্দীগ্রাম নামে এক গ্রাম ছিলো। সেই গ্রামে এক বামনী বয়স্কা মহিলা তার একমাত্র ছেলে ও ছেলের বউকে নিয়ে বাস করতো। এদের তিনজনেরই স্বভাব চরিত্র ভালোই ছিলো। শাশুড়ি-বউয়ের মধ্যে খুঁটিনাটি নিয়ে ঝগড়াঝাটি কিচ্ছুই হতো না। সম্পর্ক তাদের ভালোই ছিলো। তবে বামনীর ছেলের বৌটির একটা বাজে গুণ বা বদ্গুণ ছিলো। সেটা হল, সে ছিলো খাওয়ার দিক। থেকে খুব লোভী প্রকৃতির মেয়ে। সে যখন যা পেতো তা-ই খেতো। খাওয়ার ব্যাপারে কোনো না ছিলো না। এমনকি সে ঠাকুরকে দেওয়া সাজানো নৈবেদ্য থেকে আজ এটা কাল সেটা এইভাবে তুলে নিয়ে খেতো। এতে একটা বড় কুফল ঘটল সেই বৌটার ভাগ্যে। সেই কুফলটা হল তার যতগুলো ছেলে হয় সেগুলো সবই মারা যায়। বৌটার মন প্রচণ্ড ভেঙে যায়। বামনী ও চিন্তায় পড়ে যায়। সে পাড়াতে বয়স্কা মহিলাদেরকে তার বৌ-এর ঘটনা সব বলে জানতে চাইল যে এর প্রতিকার কী আছে। সবাই শুনে বামনীকে বলল যে তার বৌমা
যেন পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীর দিন পাঠাই ষষ্ঠীর ব্রত করে। তাহলে তার সকল দুঃখকষ্টের অবসান ঘটবে। ছেলেপুলে হলে তারাও বাঁচবে। বামনী এই কথা শুনে বাড়িতে ফিরে এলো এবং বউকে ওই পাটাই ষষ্ঠীর ব্রত করার কথা বলল।
শাশুড়ির থেকে ওই ব্রত করার কথা শোনামাত্র সে ব্রত পালনে উদগ্রীব হয়ে উঠল। তারপর বামনী পৌষ মাসের পাটাই ষষ্ঠীর দিন উঠানে একটা ছোট পুকুর কাটল এবং তাতে বেনাডালের পাটাই পুঁতলো। তারপর নৈবেদ্য সাজালো ও পুরোহিত মশাইকে খবর পাঠালো পূজা করতে আসার জন্য। ওদিকে ওই নৈবেদ্যটা দেখে বৌটার তো আবার খুব লোভ হল। তার শাশুড়ির আদেশেই তাকে যেতে হল পুকুরে বাসী কাপড় কেচে স্নান করে আসার জন্য। এর ফাঁকে পুরোহিত এসে তার নামে সংকল্প করে পূজা করলো। শাশুড়ি শাঁক বাজালো। সেই শব্দ পেয়ে সে তাড়াতাড়ি স্নান করে উঠে আসতে যেই গেলো ওমনি সে পা পিছলে পড়ে গেলো ও অচেতন হয়ে পড়লো। কিন্তু এ খবর কেউই জানল না। তার অনেকক্ষন পর সেই ঘাটের পাশে দিয়ে ধোপা আসছিলো তাদের বাড়িতেই তার নিয়ম মতো পাওয়া নৈবেদ্যটা নিতে। হঠাৎ বউকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে সেই ধোপাটা ছুটে গেলো তার শাশুড়ির কাছে। শাশুড়ি খবরটা পাওয়া মাত্র দৌড়ে গেলো বউ-এর কাছে। তারপর বউ-এর চোখে মুখে জলের ছিটা দিয়ে তাকে সচেতন করে তুলল এবং বাড়িতে ফিরিয়ে আনল। তারপর বউটাকে মা-ষষ্ঠীর ঘটের সামনে বসিয়ে তাকে বলল ভক্তিভরে বর চাইতে ও প্রণাম করতে। শাশুড়ির কথা মতো সে তাই করল। মা ষষ্ঠীর দয়া হল তার উপর। তারপর দেখতে দেখতে সে পোয়াতি হল এবং দশমাস দশ দিন পর সময় মতো ঠিক-ঠাকভাবেই তার একটা ছেলেও হল। ফুটফুটে দেখতে হল তাকে। আস্তে আস্তে তার লোভী ভাবটাও কেটে গেলো আরো সন্তানাদি হল। সবাই বেঁচে রইল। এইভাবে প্রচারিত ও প্রসারিত হল এই পাটাই ষষ্ঠী ব্রতের কথা।
নাটাই ষষ্ঠীর ব্রত ব্রতফল :
পৌষমাসের শুক্লাপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে যে রমনী এই ব্রত ভক্তিভরে পালন করে। তাদের সন্তানাদির অকাল মৃত্যু হয় না। যে রমনীদের সন্তানাদি জন্ম নেওয়ার পর মারা যায়, বাঁচে না তাদেরও এই ব্রত পালনের ফলে সুফল মেলে। সন্তানাদি জন্মালে তাদের আর হারাতে হয়। না।
0 Comments