-->

জয় মঙ্গলবার ব্রত | Joy Mongal Bar Brata

জয় মঙ্গলবার ব্রত |  জয় মঙ্গলবার ব্রত | Joy Mongal Bar Brata |  জয় মঙ্গলবার ব্রত কথা | জয় মঙ্গলবার ব্রত করার নিয়ম, জয় মঙ্গলবার ব্রত সময়, জয় মঙ্গলবার ব্রত এর ফল | Joy Mongal Bar Brata

জয় মঙ্গলবার ব্রত

জয় মঙ্গলবার ব্রত

(জ্যৈষ্ঠ মাস) নিয়মঃ নিচের মন্ত্রটি তিনবার জপ করতে হয়। তারপর গদ খেতে হয়। মন্ত্রকথা : সোনার মঙ্গলচণ্ডী রূপোর বালা। কেন মা মঙ্গলচণ্ডী এত বেলা।। হাসতে হাসতে তেল-হলুদ মাখতে, শাঁখা শাড়ী পরতে, অঘাট ঘাট কর্তে, অপথ পথ কর্তে, চোরের বন্ধন ঘুচাতে, অবিবাহিতের বিয়ে দিতে, নিৰ্ধনীতে ধন দিতে, হা-পুতির পুত্র দিতে, কানার চক্ষু দিতে, অন্ধের নড়ি দিতে, অরাজকের রাজ্য দিতে, তাই এত বেলা।।

Read This: Mangal Chandi Brata Katha in Bengali With PDF

ব্রতকথা : একদিন দেবী ভগবতী পদ্মার কাছে মর্ত্যে তাঁর পূজা প্রচারের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। পদ্মাও সেই ইচ্ছার কথা শুনে আনন্দচিত্তে মাকে জানতে চাইলেন কিভাবে তিনি তাঁর পূজা প্রচার করতে চান। এরূপ কথপোকথনের পর দেবী ভগবতী ঠিক করলেন তিনি বুড়ী বামনীর বেশ ধরে মর্ত্যে যাবেন ও তাঁর নিজের পূজা প্রচার করবেন।


যেমনি কথা তেমনি কাজ। হঠাৎ একদিন তিনি এক বুড়ীর ছদ্মবেশ ধরে ধনপতি নামে এক বেনের বাড়ীতে গিয়ে ভিক্ষা চাইলেন। ধনপতি বেনের বউ তাঁকে ভিক্ষা দিতে এলে তিনি তাকে জানতে চাইলেন তার কটি সন্তান। উত্তরে বউটি বলেছিলো তার কোনো পুত্র সন্তান নেই তবে তার সাতটি মেয়ে রয়েছে। এই কথা শুনে দেবী ভগবতী বললেন, যার কন্যা হয় না তার মুখ দেখতে আছে কিন্তু যার পুত্র হয় না তার মুখ দেখতে নেই। তাই তিনি তার হাত থেকে ভিক্ষা নিতে পারবেন না। এই কথা বলে তিনি চলে গেলেন। তাঁর মুখে এই কথা শোনামাত্র বেনেবউ বড় দুঃখ পেলো ও কাঁদতে লাগল। তারপর ধনপতি বাড়ীতে ফিরলে তার বউ তাকে সব বলল। সব কথা শুনে ধনপতি ও তার সাত মেয়ে বেড়িয়ে পড়ল সেই বুড়ী ভিখারীকে খুঁজতে। ধনপতি হঠাৎ তাঁকে দেখতে পেল একটি বটগাছের নিচে বসে আছে। সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে তাঁর পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল ও ছেলে হবার উপায় জানতে চাইল। তখন সেই ভিখারীবেশী ভগবতী একটি ফুল দিল ও বলল, যে তার বউ যেন অতুমানের দিন ওই ফুলটি ধুয়ে জল খেয়ে নেয় তাহলেই ছেলে হবে।


বুড়ীর কথামতো ঋতুন্নানের দিন তার বউ সেটি ধুয়ে জল খেলো ও গর্ভবতী হল। সবাই ছেলে হবার আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠল। এরপর দশমাস দশদিন অতিবাহিত হলে বেনে বউ-এ প্রসব যন্ত্রণা হল কিন্তু সে সন্তান প্রসব করতে পারছিলো না। এমন সময় দেবী ভগবতী আবার বুড়ীর বেশ ধরে তাদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হল ও বাড়ীতে প্রচুর ভিড় দেখে ভিড়ের কারণ জানতে চাইল। সব শুনে বুড়ী ভিতরে গেল ও বেনে বউয়ের পেটে হাত বুলিয়ে দেওয়ামাত্রই তার সন্তান হল। তখন তিনি তার নাম জয়দেব রাখলেন ও চলে গেলেন।


এরপর কিছুকাল অতিবাহিত হল। তারপর হঠাৎ একদিন ভগবর্তী আবার বুড়ীর ছদ্মবেশে মর্ত্তো এলেন এবার এসে তিনি গেলেন লক্ষপতি বেনের বাড়িতে ভিক্ষা চাইতে। বেনে বউ তাকে ভিক্ষা দিতে এলে তিনি তাকে তার কটি ছেলে মেয়ে তা জানতে চায়। উত্তরে বেনে-বউ বলে তার সাত ছেলে কিন্তু কোনো মেয়ে নেই। এই শুনে তিনি বললেন যে যার কোনো কন্যাসন্তান হয়না তার থেকে ভিক্ষা নিতে নেই। এই বলে তিনি চলে গিয়ে আবার একটি গাছের নিচে বসলেন। লক্ষপতি বেনে তারপর সবকথা শুনে লোকজন নিয়ে গেলেন সেই বুড়িকে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু তিনি ফিরলেন না শুধু একটা ফুল দিয়ে বললেন, যে ঐ ফুলটি যেন বেনে বউ তার ঋতুস্নানের দিন ধুয়ে জল খায় তাহলেই তার কন্য সন্তান হবে। লক্ষপতি বাড়ি ফিরে বুড়ির কথামত সব কাজ করল তারপর তার বউ গর্ভবতীও হল। এইভাবে দশমাস দশদিন হওয়ার পর, বেনে বউয়ের প্রসব যন্ত্রণা হল সেদিন দেবী আবার মর্ত্তে এলেন ও ছলে বলে বুড়ির বেশ ধরে তার কাছে গিয়ে তার পেটে হাত বুলিয়ে দিল ও তার সঙ্গে সঙ্গেই কন্যা সন্তান হল। বুড়ি তারপর এই মেয়েটির নাম জয়াবর্তী রেখে চলে গেল। এইভাবে দিন কাটতে লাগল। জয়াবর্তী ক্রমশ বেড়ে উঠতে লাগল। তারপর একদিন হঠাৎ জয়াবর্তী যখন তার খেলার সঙ্গীসাথীদের সঙ্গে খেলা ও পূজা করছিল তখন জয়দেবের একটা পায়রা এসে তার কোলের উপর বসল। জয়দেব এসে পায়রাটা চাইল। কিন্তু জয়াবর্তী তা দিতে অস্বীকার করল ও আবার ধান দূর্বা নিয়ে পূজা শুরু করল এবং তার সাথীরা খেলতে লাগল। জয়দেব জয়াবতীকে জানতে চাইল যে সে কি করছে। উত্তর জয়াবতী বলল, মা মঙ্গলচণ্ডীর পূজা করছে। সে আরো বলল, যে এই পুজা করলো “হারালে পায়, মলে জিওয়, খাঁড়ায় কাটে না আগুনে পুড়ে না, জলে ডোবে না, সতীন মেরে ঘর হয়, রাজা মলে রাজা পায়।"


জয়াবতীর মুখ থেকে এই কথা শুনে জয়দেব পায়রা নিয়ে বাড়ি ফেরে ও ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে। অনেকক্ষণ পর সে তার মাকে বলে যে ওই জয়াবতীর সাথেই তার বিয়ে দিতে হবে। তা নাহলে সে স্নান যাওয়া কিছুই করবে না। তার মা তা করতে রাজী হয় ও আরো বলে যে সে তার স্বামীকেও এ ব্যপারে রাজী করাবে। শেষ পর্যন্ত ধনপতি বেনে এই বিয়েতে রাজীও হয় ও জয়াবতীকে আশীর্বাদ ও করে আসে। এরপর বেশ ধুমধাম করেই বিয়ে হয় জয়দেব ও জয়াবতীর। তাদের বিয়ের পর তারা বাসর ঘরে গিয়ে নিয়মকানুন সেরে শুতে গেল। জয়াবতী ঘুমালো না। এদিকে জয়দেবও ঘুমের ভান করতে লাগল। জয়াবতী তাকে ঘুমও ভেবেই আগের মতোই গদখেলো। ঠিক তখনই জয়দের উঠে জিজ্ঞাসা করল সে তাকে গুণ-তুক করছে কিনা। উত্তরে জয়বর্তী বলল সে তাকে কিছু গুণ-তুক করছে না। সে তার পূর্বের নিয়ম মতোই জয়মঙ্গল বারে গদ খেলো তাছাড়া আর কিছুই নয়। পরদিন সকাল হল লক্ষপতি মেয়েকে ধনরত্নে সাজিয়ে দিল।

তারপর তারা বর-বউ ডিঙিতে করে রওনা দিলো। সাত ডিঙ্গা প্রচুর ধনরত্নে পরিপূর্ণ হল।। জলপথে যেতে যেতে জয়দেব জয়াবতীকে বলল সে যেন তার গায়ের সমস্ত গহনা একটা বাক্সে ভরে তাকে দিয়ে দেয় কারণ সেখানে জলদস্যুর উৎপাত প্রচুর। এই কথা শুনে জয়াবর্তী তাই করল। তারপর জয়দেব সেই গহনা ভর্তি বাক্সটা জলে ফেলে দিল। জয়াবতী তা দেখে শিউরে উঠল ও মনে মনে মা মঙ্গলচন্ডীকে স্মরণ করল। জয়দেব যে রূপার বাটায় করে ঐগুলি ফেলে ছিলো তা ভক্ষণ করেছিল একটি বোয়াল মাছ।


তারপর তাদের নৌকা পাড়ে ভিড়লো। লোকজন ভিড় জমালো নতুন বউ দেখতে। তবে বউকে দেখে সবাই হতবাক হয়ে গেল। সকলে বলাবলি করতে লাগল নতুন বউয়ের গায়ে কোনো গহনা নেই কেন? জয়দেবের সাত বোন বলতে লাগল সাত ভাইয়ের বোন হয়েও তার অঙ্গে কেন কোনো অলঙ্কার নেই। জয়দেব তাদেরকে থামতে বলে, কিন্তু তার কথাতে তাকেই আরো সবাই নিন্দা করতে লাগল। যাইহোক শেষ পর্যন্ত বেনে বউ তার নতুন পুত্রবধুকে বরণ করে ঘরে তুলে নিলেন। সবাই আপাতত থেমেই গেল। এরপর এলো বউ ভাতের দিন। প্রচুর লোক নিমন্ত্রিত। জেলেদের উপর দায়িত্ব ছিল মাছ ধরে আনার। কিন্তু তারা তা আনতে ব্যর্থ হল। জয়াবতী তারপর বলে পাঠালো সাগরে জাল-ফেলার কথা। সেই মত সাগরে জাল ফেলা হলও সেই বোয়াল মাছটাই ধরা পড়ল। মাছ ধরা হলেও তা কেউ আর কাটতে পারল না। তখন জয়াবতী বলল সেই মাছ কাটবে তবে একটা কাপড়ের কান্ডার করে দিতে বলল যাতে করে সবার আড়ালে সে মাছ কাটতে পারে। প্রথমে তার শ্বাশুড়ির আপত্তি থাকলেও তার জেদাজেদিতে সেই মাছ কাটতে বসলো। তারপর সে তার মাথায় গোঁজা কাজল লতাটা দিয়ে মাছটার গায়ে ঠেকালো। মা মঙ্গলচন্ডীর দয়ায় মাছ দুভাগ হয়ে গেল। তখন সে তার পেট থেকে সোনাগুলি বের করে তা পরে নিলো। তার অলৌকিক শক্তিতে সবাই স্তম্ভিত হল। সবাই বলল যে ওই জয়াবতী

রান্না না করলে, পরিবেশন না করলে তারা কেউই খাবে না।। কম বয়সী মেয়ে রান্না করতে পারবে না এই ভয় পেয়ে তার শ্বাশুড়ি তাকে রাঁধতে যেতে দিচ্ছিল না। কিন্তু জয়াবতী মা মঙ্গলচন্ডীকে মনে মনে স্মরণ করে রাঁধতে বসল। সুগন্ধে ভরে উঠল আকাশ বাতাস। রান্না শেষ হল এবার এলো পরিবেশনের পালা। জয়াবতী তাও সম্পন্ন করলো। সবাই সেই রান্না খেয়ে ধন্যি ধন্যি করল ও জয়াবতীর সন্তান হোক এই আশীর্বাদ করে চলে গেল।

তারপর ক্রমশঃ দিন এগিয়ে চলল। জয়াবতী মা মঙ্গলচন্ডীর দয়ায় গর্ভবতী হলো। সমস্ত আচার অনুষ্ঠান মেনে দশমাস নয়দিন পর জয়াবতী প্রসব করল তার একমাত্র ফুটফুটে সন্তান। ছেলেটি জন্মাবার পাঁচদিনের দিনকে জয়াবর্তী তাকে রেখে স্নান করতে গেলো। এমন সময় জয়দের এসে তাকে নিয়ে ফেলে দিয়ে এলো। মা মঙ্গলচন্ডীর আসন নড়ে উঠলো তিনি ব্রহ্মাকে সেই ছেলেকে রক্ষা করতে বললেন। ব্রহ্মা ছেলেটিকে রক্ষা করলেন ও তাকে নিজের কোলে নিয়ে ঘরে বসে রইলেন। জয়াবতী এসে জিজ্ঞাসা করলেন— 'আপনি কে মহোদয়? ব্রহ্মা বললেন তিনি যেইহোন না কেন, তিনি তাদের ভালো চান ও তাই তিনি ছেলেটিকে একা দেখে তাকে রক্ষা করেছেন।


এরপর ষট্‌পূজা অর্থাৎ ছয় দিনের দিন জয়াবতী ছেলে রেখে স্নান করতে গেল। এই ফাঁকে জয়দেব এসে তাকে নিয়ে গরুর পায়ের নিচে রেখে গেলো। মা ভগবতী এবার এসে তাকে রক্ষা করলো। পরে জয়াবতী ফিরে এলে ভগবতী তার হাতে ছেলে দিয়ে চলে গেলো।


আট দিনের দিন জয়াবতী স্নান করতে গেলে জয়দেব সেই ছেলেকে নিয়ে হাতির পায়ের তলায় রেখে এলো। কিন্তু মা ভগবতী সব জানতে পেরে হাতিকে নির্দেশ দিলেন সে যেন  ছেলেটির কোন ক্ষতি না করে। ভগবতীর কথামতো হাতিটি তাকে নিজের শুঁড়ে করে নিয়ে খেলা করতে লাগল। জয়াবতী এলে হাতি তার ছেলেকে তাকে দিয়ে চলে গেল। এরপর নয় দিনের দিন জয়দেব তার ছেলেকে অশ্বিনীর পায়ের নিচে দিয়ে এলো। কিন্তুএবারেও মা ভগবতীর আদেশে অশ্বিনী ছেলের প্রাণ রক্ষা করল ও জয়াবতী এলে তাকে তার ছেলেকে দিয়ে চলে গেল। ছেলেটির যখন এক মাস পূর্ণ হল তখন নিয়মানুযায়ী ষষ্ঠী পূজার আয়োজন করা হল। ষষ্ঠীপূজার দিন জয়দেব ছেলেকে নিয়ে পুকুরের পাঁকে পুঁতে দিয়ে এলো। জয়াবতী যখন স্নান সেরে পুকুর থেকে উঠে আসতে গেল তখন ছেলেটি তার শাড়ীর আঁচল ধরে টান দিলো। জয়াবতী মা ভগবতীর দয়াতে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো।


তারপর ছেলের ছয়মাস পূর্ণ হল। অন্নপ্রাশনের দিন স্থির হল। অন্নপ্রাশনের দিন জয়দেব তার ছেলেকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলল। মা ভগবতীর এবারও দয়া হল ও তিনি সেদিন তাদের বাড়িতে এসে অমৃতকুন্ডের মধ্য থেকে অমৃত দিয়ে কাটা ছেলের উপর ছিটিয়ে দিল ও সঙ্গে সঙ্গেই ছেলেটি বেঁচে উঠল। তারপর তিনি জয়াবতীর কাছে তার ছেলেকে দিয়ে চলে গেলেন।


এতদিন পর জয়দেব জয়াবতীকে তার ব্রতের জন্য প্রশংসা করল তবে এটাও বলল যে সব প্রমাণ পেলেও এখনো একটা প্রমাণ সে পায়নি। উত্তরে জয়াবর্তী বলে ছিলেন সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে।


তারপর বেশ কিছুদিন কেটে গেল। সে রাজ্যের রাজা মারা গেলেন। রাজা খুঁজতে বের হলো শ্বেত হাতি। তারপর মা ভগবতীর কৃপায় জয়দেবই রাজা হল সে দেশের রাণী হল জয়াবতী। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হল তারা তাদের সন্তানাদিরও বিবাহাদি দিল। তারাও সুখী হলো। তারপর স্বর্গ থেকে প্রেরিত রথে জয়াবতী ও জয়দের মর্ত্যালোক ত্যাগ করল। মা মঙ্গ ল চন্ডীর পূজা দিকে দিকে প্রচারিত হল।

You May Like Also Also Like This

Post a Comment

0 Comments


Advertisement