লক্ষ্মী হলেন একজন হিন্দু দেবী। তিনি ধনসম্পদ, আধ্যাত্মিক সম্পদ, সৌভাগ্য ও সৌন্দর্যের দেবী। তিনি বিষ্ণুর পত্নী। তার অপর নাম মহালক্ষ্মী ইনি স্বত্ত্ব গুন ময়ী। জৈন স্মারকগুলিতেও লক্ষ্মীর ছবি দেখা যায়। লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা।
কার্তিক মাসের লক্ষ্মী পূজার ব্রত
এক দেশের রাজার পাঁচটি মেয়ে ছিল। একদিন রাজা সব মেয়েদের ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তারা সকলে কার ভাগ্যে খায়। এই কথার উত্তরে রাজার ছোটমেয়ে ছাড়া আর সকলেই বলল যে, তারা রাজামশায়ের ভাগ্যে খায়। কিন্তু ছোটমেয়ে বলল যে, যে যার নিজের ভাগ্যে খায়, আর মা লক্ষ্মী তার ব্যবস্থা করে দেন। ছোটমেয়ের কথা শুনে রাজার খুব রাগ হল। তিনি ঠিক করলেন যে, সকালে উঠে তিনি প্রথমে যার মুখ দেখবেন তারই সঙ্গে ছোটমেয়ের বিয়ে দেবেন। পরের দিন সকালে উঠে রাজা বাইরে বেরুতেই দেখলেন যে, অপর এক রাজ্যের এক ব্রাহ্মণ আর তার ছেলে রাজবাড়ির সামনে দিয়ে কোথাও যাচ্ছে। রাজা ব্রাহ্মণকে ডেকে তার সঙ্গে কথা বলে তার ছেলের সঙ্গে ছোটমেয়েটির বিয়ে দিয়ে দিলেন।
রাজার মেয়ে তার ছেলের বউ হল দেখে বেচারা গরিব ব্রাহ্মণ খুবই আশ্চর্য হল আর বেশ চিন্তায় পড়ল। রাজকন্যার মনে কিন্তু কোনো কষ্টই হল না, সে বেশ আনন্দে স্বামী আর শ্বশুরকে নিয়ে ঘর করতে লাগল। এইভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেল। এরই মধ্যে রাজকন্যা একদিন স্বামী ও শ্বশুরকে বলল, “বাড়ির সামনে যা দেখতে পাবেন নিয়ে আসবেন।” একদিন তার স্বামী বাড়ির সামনে একটা মরা কেউটে সাপকে পড়ে থাকতে দেখল। সে তার স্ত্রীর কথামত সাপটাকে তুলে এনে তার স্ত্রীকে দিয়ে দিল। রাজকন্যাও সেই মরা সাপটাকে এক জায়গায় তুলে রাখল।
সেই সময়, সে দেশের রাজার ছেলের খুব অসুখ হয়েছিল। অনেক কবিরাজ-বৈদ্য দেখলেন কিন্তু কেউ তার রোগ সারাতে পারলেন না। শেষে এক বুড়ো কবিরাজ বললেন যে, একটা মরা কেউটে সাপের মাথা যদি কোনো রকমে যোগাড় করতে পারা যায়—তাহলে তাঁর ছেলেকে বাঁচানো যাবে। রাজা এই কথা শুনে চারিদিকে ট্যাড়া পিটিয়ে দিলেন যে, মরা কেউটে সাপের মাথা যে এনে দিতে পারবে, সে যা চাইবে রাজা বিনা দ্বিধায় তাকে তাই দেবেন। এই ট্যাড়া পেটানোর কথা রাজকন্যাও শুনতে পেল। সে তখুনি তার শ্বশুরকে দিয়ে মরা কেউটে সাপটা রাজার কাছে পাঠিয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে সে শ্বশুরকে একথাও বলে দিল যে, রাজা কিছু দিতে চাইলে তা যেন না নেওয়া হয়—শুধু রাজাকে এইটুকু বলতে হবে যে, তার রাজ্যে, কার্তিক মাসের অমাবস্যার রাত্তিরে কোনো গ্রামের কোনো ঘরে কেউ যেন না আলো জ্বালায়।
রাজকন্যার শ্বশুর রাজাকে এই কথা জানিয়ে শুধু হাতেই ফিরে এলেন – আর রাজাও আবার চারদিকে ট্যাড়া পিটিয়ে সকলকে জানিয়ে দিলেন যে, কার্তিক মাসের অমাবস্যার রাত্তিরে তার রাজ্যে কেউ যেন আলো না জ্বালায়। তারপর কার্তিক মাসের অমাবস্যার রাত আসতে রাজকন্যা নিজে খুব
জাকজমকের সঙ্গে লক্ষ্মী পুজো করল এবং বাড়িখানার চারদিকে আলো দিয়ে খুব সাজিয়ে রাখল। মা লক্ষ্মী পুজোর দিন মর্ত্যের গ্রামে এলেন। মা লক্ষ্মী দেখলেন, একমাত্র সেই গরিব ব্রাহ্মণের বাড়ি ছাড়া আর কারুর বাড়িতে আলো জ্বলছে না। মা তখন সেই গরিব ব্রাহ্মণের ঘরেই ঢুকলেন। রাজকন্যাও খুব ভক্তি নিষ্ঠুর সঙ্গে মা লক্ষ্মীর পুজো করল। মা লক্ষ্মীও রাজকন্যার পুজোয় খুব সন্তুষ্ট হয়ে বললেন, “তোর ঘরে আমি আমার পায়ের নূপুর রেখে যাচ্ছি, এখন থেকে আর তোদের কোনো কষ্ট থাকবে না।” যাবার সময় মা লক্ষ্মী রাজকন্যাকে একথাও বলে গেলেন যে, তারা যেন ভাদ্র মাস, কার্তিক মাস, পৌষ মাস আর চৈত্র মাসেও এমনি ভাবেই লক্ষ্মী পুজো করে।
মা লক্ষ্মীর দয়ায় গরিব ব্রাহ্মণের আর কোনো কষ্টই রইল না, তারও রাজার মত ঐশ্বর্য হল। অবস্থা ভাল হবার পর রাজকন্যা তার শ্বশুরকে একটা পুকুর প্রতিষ্ঠা করতে বলল। রাজকন্যার কথা মত পুকুর কাটানো হল। প্রতিষ্ঠার দিন বহু কে খাওয়ানোর ব্যবস্থা হল। দলে দলে লোক খাওয়া-দাওয়ার জন্যে আসতে লাগল, আর রাজকন্যা সব দেখতে লাগল বাড়ির জানলায় বসে। এমন সময় রাজকন্যা দেখল যে, সেই সব লোকজনের মধ্যে তার বাবাও রয়েছেন। সে তখুনি তার শ্বশুরকে দিয়ে তার বাবাকে ডানিয়ে আনালো আর নিজের পরিচয় দিল তাঁর কাছে। রাজকন্যার বাবাও তখন মেয়েকে জানালেন যে, মা লক্ষ্মী তার ওপর অসন্তুষ্ট হওয়ায় তাঁর রাজ্য, ধন-সম্পত্তি সবই নষ্ট হয়ে গেছে। রাজকন্যা সব শুনে তার বাবাকে লক্ষ্মীপুজো করতে বলল। এরপর রাজা দেশে ফিরে গেলেন এবং খুব ভক্তি করে লক্ষ্মীপুজো করলেন। এর ফলে অল্পদিনেই রাজা তার রাজ্য ও ধন-সম্পত্তি সবই ফিরে পেলেন। রাজা বেশ কিছুদিন তার রাজ্যের ও সংসারের সকলকে নিয়ে বেশ শান্তিতে বাস করলেন, শেষে তাঁর ছেলে-মেয়েদের লক্ষ্মীপুজো করার জন্যে উপদেশ দিয়ে স্বর্গে চলে গেলেন। এইভাবেই কার্তিক মাসের অমাবস্যা মা লক্ষ্মীর পুজোর প্রচার হল মর্তো।
You May Like Also Also Like This
0 Comments