অনন্ত-চতুর্দশী ব্রত
অনন্ত চতুর্দশী বা গণেশ বিসর্জন একটি হিন্দু ও জৈনদের উৎসব। অনন্ত চতুর্দশী হল দশ দিনব্যাপী গণেশোৎসব বা গণেশ চতুর্থী উৎসবের শেষ দিন। এটিকে গণেশ চৌদাসও বলা হয়। ভক্তরা অনন্ত চতুর্দশীতে তাঁর মূর্তিগুলিকে জলে ডুবিয়ে (বিসর্জন) দেবতা গণেশকে বিদায় জানান । চতুর্দশী চন্দ্র পাক্ষিকের 14 তম দিন। স্বাভাবিক নিয়মে, গণেশ চতুর্থীর 10 দিন পরে অনন্ত চতুর্দশী পড়ে।
ব্রতের নিয়ম:
ভাদ্র মাসের শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে এই ব্রত গ্রহণ করতে হয়। ব্রতীগণকে স্নান করার পর ব্রতকথা শুনে অনন্তদেবকে প্রণাম করে নিচের মন্ত্রটি পাঠ করতে হয়—
“হে দেবেশ অনন্তদেব। আপনি প্রসন্নচিত্তে স্বস্থানে গমন করুন, পুনরায় অনুগ্রহপূর্বক আমার আলয়ে আগমন করিবেন। আপনার শ্রীচরণে আমার কোটি কোটি প্রণাম।'
ব্রতকথা :
মামা শকুনির বৃদ্ধিতে কৌশলের বড় ভাই দুর্যোধন পাণ্ডবকুলের বড়ভাই যুদ্ধিষ্ঠিরকে পাশাখেলায় আহ্বান করে। তারপর শকুনি এবং কৌরবকুলের চাতুরিতে পাশাখেলায় যুধিষ্ঠিরকেই হারতে হয় এবং পূর্ব শর্তমত পঞ্চপাণ্ডব দ্রৌপদী সহ সকলকেই বারো বছর বনবাস জীবন বরণ করতে হয়। চৌদ্দ বছর বনবাসে থাকার কথা ছিল বারো বছর বনবাস তারপর এক বছর অজ্ঞাতবাস এই মোট তের বছর। পাশাখেলায় হেরে যুধিষ্ঠির ভাইদের নিয়ে এবং দ্রৌপদীকে নিয়ে বনবাসে গমন করে।
যুধিষ্ঠির ছিলো খুবই ধার্মিক মানুষ। শ্রীকৃষ্ণ তাই পাণ্ডবপক্ষকে সমর্থন করে তাদের সঙ্গেই অধিকাংশ সময় থাকতেন। একদিন তিনি দ্রৌপদীকে অনন্ত ব্রত পালনের কথা বললেন। এই ব্রত পালনে দ্রৌপদীর সকল দুঃখ কষ্ট কেটে যাবে তাও তিনি দ্রৌপদীকে বললেন। দ্রৌপদী জানালো যে সে এই ব্রতের নিয়ম-কানুন জানে না এবং জানতে চাইল শ্রীকৃষ্ণ যখন তাদের সঙ্গেই আছে। তখন আলাদা করে ব্রত পালনের দরকারই বা কী? কিন্তু শেষ পর্যন্ত শ্রীকৃষ্ণের কথামত যখন সে ব্রত পালনে রাজী হল তখন যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীকে বলল যে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ যখন আমাদের সঙ্গে ই আছেন তখন যেন তাঁরই চরণ মনে মনে করে ব্রত পালন করে তাহলেই ব্রত পালনের সব নিয়ম মানা হবে। তারপর ভাদ্রমাসের শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে দ্রৌপদী এই অনন্ত ব্রত গ্রহণ করল এবং পঞ্চপাণ্ডব ফলমূল যোগাড় করতে বনে গেল। এই সময় জয়দ্রথ দ্রৌপদীর কাছে আসে। এই দেখে দ্রৌপদী তাদের আত্মীয় ভেবে সরল মনে তাকে যত্ন ও অতিথি সেবার আয়োজন করতে থাকে। কিন্তু দুষ্টমতি জয়দ্রথ দ্রৌপদীকে একলা দেখে তাকে জোর করে ধরে নিয়ে যেতে লাগল। এমন সময় দ্রৌপদী কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে একটু শান্ত হয়ে একমনে অনস্তদেব কৃষ্ণকে স্মরণ করল এবং তার উদ্ধারের প্রার্থনা করল।
দ্রৌপদীর ডাকে সন্তুষ্ট হয়ে সুদর্শন চক্রকে পাঠিয়ে দিলো জয়দ্রথকে রুখবার জন্য। পথিমধ্যে জয়দ্রথ সুদর্শন চক্র দেখে ভয় পেলো এবং দ্রৌপদীকে ফেলে দিয়ে পালাতে গেল এমন সময় সে পান্ডবের সামনাসামনি পড়ে গেল। তারপর দ্রৌপদীর মুখে সব শুনে ভীম অর্জুনরা সবাই মিলে জয়দ্রথের অন্যায়ের উচিত শিক্ষা দিল। তারপর জয়দ্রথ মার খেয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পান্ডবরা দ্রৌপদীকে নিয়ে আশ্রমে ফিরে গেল এবং দ্রৌপদী ব্রত সম্পন্ন করতে লাগলো। তখন কৃষ্ণ সেখানে গেলো। তাকে দেখতে পেয়ে দ্রৌপদী তাকে প্রণাম জানালা তাকে বাচানোর জন্য। কৃষ্ণ ছলনা করার চেষ্টা করলে দ্রৌপদী তাঁকে বলে যে সে শুধু সুদর্শন চক্রকে দেখতে পেয়েছে। তাই নয় এমনকি কৃষ্ণের শ্যামবর্ণ, বিশ্বগ্রাসী অগ্নিশিখা ও সে দেখেছে এবং মাভৈঃ মাভৈঃ রবও সে শুনেছে।
এই সমস্ত কথা দ্রৌপদীর মুখে শোনার পর শ্রীকৃষ্ণ তার উপর সন্তুষ্ট হলেন এবং তাকে বললেন যে সে যেন চৌদ্দ বছর এই ব্রত পালন করে উদযাপন করে তাহলেই তার সমস্ত দুঃখ কষ্ট অভাব কেটে যাবে এবং আরো বললেন যে মৰ্ত্তে যে এই ব্রত ভক্তিভরে পালন করে তার ব্রহ্ম হত্যা ইত্যাদি পাপ খণ্ডন হয়। সে পাপমুক্ত হয়। এই ব্রতপালনে মানুষের পুণ্য হয়।
ব্রতফল:
মহিলারা এই ব্রত পালন করলে তাদের কোনো বিপদ থাকে না। মৃত্যুর পরে তারা বৈকুণ্ঠধামে গমেন করে এবং জীবত অচ...... স্বামীপুর নিয়ে পরম সুখে দিন যাপন করতে পারে।
You May Like Also Also Like This
0 Comments