দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব হল হিন্দু দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত একটি উৎসব। দুর্গাপূজা সমগ্র হিন্দুসমাজেই প্রচলিত। তবে বাঙালি হিন্দু সমাজে এটি অন্যতম বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। আশ্বিন বা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গাপূজা করা হয়। আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয়া দুর্গাপূজা এবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। শারদীয়া দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা বেশি। বাসন্তী দুর্গাপূজা মূলত কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
মহালয়ার তাৎপর্যঃ
মহালয়া (Mahalaya) শুধুই একটা তিথি নয়। বাঙালির সেরা উৎসব শারদোৎসবের গেটওয়েও বটে।” আব্রহ্মস্তম্ব পর্যন্তং তৃপ্যতু”-এই হল মহালয়ার সার কথা। অকালবোধনের আগে দাদা রামের তর্পণ হয়ে গেছে। হাতে সময় খুব কম,তাই লক্ষণ বললেন আমি একবারে সার্বিক তর্পণ করছি। তখনই এই মন্ত্র উচ্চারণ করে তিনি জলাঞ্জলি দিলেন। এই বাক্য যে ভাবনাকে ব্যাপ্তি দিয়েছে আজও মহালয়ার প্রকৃত তাৎপর্য তাই-ই।ওই শ্লোকের অর্থ-‘ব্রহ্ম হইতে তৃণ পর্যন্ত জগৎ তৃপ্ত হউক’। অর্থাৎ মহালয়ার তর্পণের পরিধি শুধুমাত্র পিতৃতর্পণের কর্তব্যে আবদ্ধ নয়। মহালয়ার প্রকৃত বার্তা সার্বজনীন উদারতা।
যার সাহায্যে তৃপ্তি হয় তাই তর্পণ। দেহ বিলীন হলেও,আত্মা অবিনশ্বর-পৃথিবীর সব ধর্মে ই আছে এর স্বীকৃতি। তিল-জল দিয়ে পূর্বপুরুষের আত্মার তৃপ্তিসাধনকেই হিন্দুধর্মে বলা হয় তর্পণ। তর্পণ একপ্রকার নয়। তর্পণের একাধিক নিয়ম, মন্ত্র,আচার, উৎসর্গের উপাচার এক একটি আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশ। বেদের বিভাজন অনুযায়ী চতুরাশ্রমের কাল থেকে নির্ধারিত হয়েছে সমাজের সব স্তরের মানুষের তর্পণ সংক্রান্ত রীতিনীতি। যেমন সামবেদী তর্পণ,যজুর্বেদী তর্পণ,ঋগ্বেদী তর্পণ।
পৃথিবীর উত্তর দিক যখন সূর্যের মুখোমুখি ,তখন উত্তরায়ণ। ব্যাপ্তি ছয় মাস। পরবর্তী ছয় মাস দক্ষিনায়ণ। উত্তরায়ণকালে দেবলোকে দিন ,দক্ষিনায়ণকালে রাত।দক্ষিনায়নের ছয়মাস দেবতারা নিদ্রিত,কিন্তু যমলোকে তখন দিন। তাই পিতৃপুরুষরা ছুটে আসেন মর্তলোকে। এই সময় তাঁদের ক্ষুধা ,তৃষ্ণা থাকে। উত্তর পুরুষদের কাছে একটু শ্রাদ্ধাহার পেলেই তাঁরা পরমতৃপ্ত।
মহালয়ার দিনটাই কিন্তু পিতৃপুরুষের তর্পনের জন্য একমাত্র নির্ধারিত নয়। প্রকৃতপক্ষে মহালয়ার ১৪ দিন আগে অর্থাৎ কৃষ্ণাপ্রতিপদ থেকেই শুরু হয় পিতৃতর্পণপক্ষ। অর্থাৎ ওই দিন পরলোকগত পূর্বসূরিরা মর্ত্যে নেমে আসেন। কিন্তু মহালয়ার দিনেও যদি কেউ তর্পণ করে উঠতে না পারে তা হলে কী হবে? তর্পণের আর সুযোগ নেই? এর পরেও পূর্বপুরুষের আত্মা অপেক্ষা করেন। কতদিন? একমাস। দীপান্বিতা অর্থাৎ কালীপুজো পর্যন্ত। তারপর তারা ফিরে যাবেন। কেউ তৃপ্ত হয়ে,কেউ অতৃপ্তি নিয়ে অভিশম্পাত দিতে দিতে। দীপান্বিতার দিন যেহেতু পূর্বপুরুষরা ফের প্রেতলোকে ফিরে যান তাই এদিন রীতি হল,তাদের ফিরে যাওয়া সুগম করতে পথ আলোকিত করা। এই আচারই কালীপুজোর দিন প্রদীপ জ্বালানো বা মোমবাতি দিয়ে গৃহসজ্জা কিংবা আতসবাজি পোড়ানোর রূপ নিয়েছে।
সর্বত্রই যখন পিতৃতন্ত্রের দাপট,তর্পণ মন্ত্রে পাওয়া যায় সাম্যবাদের সন্ধান।’ পিতৃ’ শব্দে জনকজননী উভয়কেই বোঝান হয়েছ।
পিতামহ,পিতামহী,মাতামহ,মাতামহীসহ,গুরুকুল,এমনকি বিশ্বসংসারের স্থাবর,জঙ্গম,সকল প্রাণীর জন্য তর্পণের বিধান আছে। যাতে তর্পণের সময় উপলব্ধি করা যায়,আপনজনের আত্মা আর বিশ্বজনের আত্মায় কোনোও ভেদ নেই। যেন অখিল বিশ্বই তার নিজের পরিবার। আসলে তর্পণ এক বিশেষ দার্শনিক ভাবনার প্রতীকি রূপ।
মহালয়া-এর অর্থ কী?
“মহালয়া” কথা টি এসেছে “মহালয়” থেকে। “মহান আলয়” যা তাই মহালয়। এর অর্থ হল- সর্বশ্রেষ্ঠ আবাস। এই সর্বশ্রেষ্ঠ আবাস হলেন স্বয়ং পরমাত্মা বা ঈশ্বর । মানুষের মনে ভালো মন্দ চিত্তবৃত্তি যখন ঈশ্বরের সচ্চিদানন্দ রূপে বিলীন হয়ে যায়, তখনই কেও মহান আলয় প্রাপ্ত হল বলা যায়।
মহালয়া মন্ত্র
যা চণ্ডী মধুকৈটভাদিদৈত্যদলনী যা মাহিষোন্মূলিনী
যা ধূম্রেক্ষণচণ্ডমুণ্ডমথনী যা রক্তবীজাশনী ।
শক্তিঃ শুম্ভনিশুম্ভদৈত্যদলনী যা সিদ্ধিদাত্রী পরা
সা দেবী নবকোটীমূর্তিসহিতা মাং পাতু বিশ্বেশ্বরী ।।
0 Comments