বীরাষ্টমী ব্রত হলো হিন্দু ধর্মে একটি ব্রত যা মা দুর্গা পূজার দিনে অনুষ্ঠিত হয়। এই ব্রতে ভক্তরা মা দুর্গার অনুগ্রহে শক্তিশালী ও সাহসী হতের কামনা করে। বীরাষ্টমী দুর্গা পূজা অক্টোবর-নভেম্বর মাসের অষ্টমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়, যা নানাভাবে মনায় হয়ে থাকে। এই ব্রতের অনুষ্ঠান কিছুটা পূজা পাঠ, ব্রতের কথা, দুর্গা মা কে আত্মসাত দান, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, ফল ইত্যাদি সহিত বিশেষ প্রকারের পূজার বিধি-বিধান অনুষ্ঠান করা হয়।
বীরাষ্টমী ব্রতের আগের রাতে ভক্তরা দুর্গা মা কে আসবেন বলে ভাবতে থাকে এবং মহিলা বা কিশোরী বৃদ্ধা মহিলা ভক্তরা পূজা প্রণামের অক্ষত রাখে। এরপর বীরাষ্টমী দিনে ব্রত অনুষ্ঠান করা হয়। ভক্তরা এই দিনে উপবাস করে এবং সকালে উঠে পূজা পাঠ ও দুর্গা মা কে আরাধনা করে। ব্রত অনুষ্ঠানে বিশেষ করে ভক্তরা সকালের সময়ে নির্গমন করে দূর্গা মা কে অর্পণ করা এবং তাদের আত্মসাত দান করে। এরপর ভক্তরা পূজা পাঠের পর ভক্তি ভাবে মা দুর্গা কে অর্পণ করে এবং তাদের অক্ষত, ফুল, ফল, নৈবেদ্য, ধূপ, দীপ ইত্যাদি সহিত অন্যান্য পূজা সামগ্রী দ্বারা পূজা অর্পণ করে।
এই বীরাষ্টমী ব্রত মৌসুমের শেষ আগমন কারণে বেশি পরিসরে প্রচলিত এবং বহুকাল ধরে এই ব্রত অনুষ্ঠান হয়। এটি মোটামুটি বিভিন্ন স্থানে মনায় হয়ে থাকে এবং এটি ভক্তদের মধ্যে বিশেষভাবে প্রিয়।
বীরাষ্টমী ব্রত
পূর্বকালে ধর্মদেব নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তাঁর কোন সন্তাননাদি ছিল না। এই জন্যে তিনি এবং তাঁর পত্নী দু'জনে সর্বদাই বিষণ্ণমনা হয়ে থাকতেন। একদিন ব্রাহ্মণ দ্বিতীয়বার বিবাহ করবেন স্থির করে তাঁর স্ত্রীকে জানালেন। ব্রাহ্মণের মনোবাসনা জেনে তাঁর পতিব্রতা পত্নী তাঁকে বিবাহের বাসনা ছেড়ে ভগবতী দুর্গাদেবীর শ্রীচরণকমল আরাধনা করতে অনুরোধ করলেন। কারণ একমাত্র আদ্যাশক্তির ইচ্ছাতেই মর্ত্যবাসিরা পুত্র-পৌত্র-ধন-সম্পদ লাভ করে থাকে। ব্রাহ্মণ নিষ্ঠাবতী স্ত্রীর কথামত শুদ্ধচিত্তে জগজ্জননীর পাদপদ্ম পুজো করতে লাগলেন। তিনি দেবীর হোম-যজ্ঞ প্রভৃতি কর্ম খুবই নিষ্ঠা ও ভক্তিসহকারে প্রতিদিন করতেন। দেবী ব্রাহ্মণের ঐকান্তিক ভক্তিতে সন্তুষ্টা হয়ে তাঁকে দর্শন দিয়ে বললেন, 'হে জিতেন্দ্রিয় ধর্মদেব! তোমাকে বীরাষ্টমী ব্রত আচরণের বিধান বলছি, মন দিয়ে শোন। --আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে অর্থাৎ মহাষ্টমীর পুণ্যপ্রভাতে শয্যাত্যাগ করে শৌচকৃত্যাদির শেষে স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে পিটুলী-গোলা দিয়ে সুন্দর অষ্টদলপদ্ম আকবে। তার ওপরে তীর্থবারিপূর্ণ একটি তামার ঘট স্থাপন করবে।
তারপর ধূপ-দীপ-নৈবেদ্য, আট রকমের ফল ও আট রকমের ফুল দিয়ে আমার (মহিষমর্দিনীর) যথাবিধিতে পুজো করবে। পরে অষ্টগ্রন্থিযুক্ত কুঙ্কুমাক্ত ডোর (পুরুষেরা ডান বাহুতে নারীরা বাম বাহুতে) বাঁধবে এবং আমাকে ভক্তিসহ প্রণাম করবে। এরপরে ব্রাহ্মণকে দক্ষিণাসহ ভোজ্য দান করবে। আট বছর এই ব্রত করবার পর ব্রতের উদ্যাপন করবে। উদ্যাপনের সময় আটজন ব্রাহ্মণকে বস্ত্র ও দক্ষিণাসহ আটটি কলসী দান করবে। এই বিধানে বীরাষ্টমী ব্রত পালন করলে অবিলম্বে তোমার
জগদ্বিখ্যাত পুত্র জন্মগ্রহণ করবে।' ব্রাহ্মণকে উপরি-উক্ত কথাগুলি বলে পরমেশ্বরী দুর্গাদেবী অন্তর্হিতা হলেন। ব্রাহ্মণের কথামত বিধি-অনুযায়ী ব্রাহ্মণী বীরাষ্টমী ব্রত পালন করলেন। এই ব্রতের ফলে তাঁর পুত্র সন্তান লাভ হল। নারীরা এই ব্রত করলে সুসন্তানের জননী হন এবং স্বামীর সোহাগিনী হয়ে থাকেন।
পুরুষেরা এই ব্রত করলে সুসন্তানের পিতা হন এবং তেজস্বিতা লাভ করে থাকেন।
You May Like Also Also Like This
0 Comments